ছোটবেলায় সংসারের হাল ধরেছেন মোফাজ্জল হোসেন। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সুখের সন্ধান পেয়েছিলেন। দুই ছেলে বিদেশ থাকে। তাই বাবার ইচ্ছা, লাখ টাকা দিয়ে গরু কোরবানি দেবেন। এত সুখ এত আনন্দ কোথায় রাখবেন। সেই সুখ আর আনন্দ মোহাজ্জাল হোসেনের ভাগ্যে জুটল না। সেই লাখ টাকার গরু কিনে হাটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেলে দাউদকান্দি উপজেলার মলয়বাজার হাটে। আজ রবিবার তাঁকে দাফন করা হয়। ঈদের আনন্দ ভুলে যেন শোকের সাগরে ভাসছে পরিবার। নিহত মোহাজ্জল হোসেন (৫৫) জিংলাতলী গ্রামের কাচারী বাড়ির মৃত আসাদ মিয়ার ছেলে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জিংলাতলী গ্রামের মৃত আশাদ মিয়া বড় ছেলে ছোটবেলায় কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের হাল ধরেছেন। কখনও মোটরসাইকেলের মেকানিক, কখনও ট্রাক চালিয়ে সংসার চালাতেন। সেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে টাকা জমিয়ে দুই ছেলে সোহাগ ও সোহরাবকে বিদেশে পাঠান। দুই ছেলে বিদেশে পাঠানোর পর পরিবারের মধ্যে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসে। ছেলেদের বাবার ইচ্ছা লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দিবে। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী ছেলেরা বিদেশ থেকে টাকাও পাঠিয়েছিলেন। গতকাল শনিবার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে উপজেলার মলয়বাজার হাটে যান কোরবানি গরু কিনতে। পুরো হাট হেঁটে ঘুরে টকটকে লাল একটি গরু এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় ঠিক করেছিলেন। এত বড় সুন্দর গরু কিনে আনন্দে আবগে আপ্লুত হয়ে হঠাৎ করে বলেন ‘আমার বুকটা কি জানি করছে’- বলেই হাটের মধ্যেই ঢলে পড়েন। নিহতের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, ভাই আমার ছোটবেলায় কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। দুই ছেলে বিদেশে পাঠানোর পর সংসারের মধ্যে আর্থিক সচ্ছ্লতা ফিরে আসে। সারাটা জীবন পরিশ্রম করে এখন সুখের দিন চলছিল। ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল বড় গরু কোরবানি দেবেন। সেই বড় গরু কেনার জন্য ঠিক করেছিলেন। কিন্তু ভাইয়ের ভাগ্যে এত সুখ তাঁর সইল না। এলাকার সমাজসেবক বশিরউল্লাহ চেয়ারম্যান বলেন, মোহাজ্জল হোসেন ছোটবেলা থেকে পরিশ্রমী ছিলেন। কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন। সুখে পড়ার পর তার শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করার আগেই আল্লাহ দুনিয়া থেকে তাকে নিয়ে গেল।
কেনা হলো শখের লাখ টাকার গরু, কিন্তু কোরবানি দেয়া হলো না মোফাজ্জেলের
